কোমল বাবুর ছাতা / ধীমান ভট্টাচার্য ( সবজান্তা গামছাওয়ালা )
কোমল বাবুর আজকাল অনেক প্রবলেম / এই যেমন ধরুন গিন্নি দোকানের লিস্ট ধরিয়ে দিলেন , বলেদিলেন আড্ডা মেরে ফেরার পথে কিনে নিয়ে এস / কোমল বাবু ভুলেগেলেন , বাড়িতে তুলকালাম , ঘটি বাটি ছোড়াছুড়ি / এতো গেলো ভুলেযাওয়ার প্রবলেম ,আর একটা প্রবলেম হলো ধনপ্রীতি , যদি কেউ কোমল বাবুকে কিপ্টে বলেন উনি রেগেযান , বলেন " অরে হালায় এরে কিপ্টেমি কয় না , কয় ধনপ্রীতি / "
কোনো নিমন্ত্রণ বাড়িতেও নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যাবেন না , বলবেন - "আমি হালায় হরিরধনী ও দিমুনা শ্রাদ্ধ ও খামুনা " /
এ হেনো অনেক গুণাবলী কোমল বাবুর আছে / বাজারে এক আম ওলির কাছে আপিস ফেরত রোজ আমের দর করেন আর কেনেন না , আম মাসির বা আর কত দিন ধৈর্য থাকে ? আমের সময় প্রায় শেষ হতে চললো / সুযোগের অপেক্ষায় ছিল আম মাসি, কোমল বাবু প্রথামেনে আম দর করতে এলেন , মেদমদ্দ আম মাসি একেবারে মেদবহুল হস্ত যুগল দিয়ে জড়িয়ে ধরলো , একে পরস্ত্রী , তার উপর মেদমদ্দ শরীরের নাগপাশ কোমল বাবুর পাটকাঠির মতো শরীরে মটমট শব্দ শব্দ তুলে নিষ্কৃতির নিষ্ফল চেষ্টা করতে লাগলো , তার উপর ২০ বছরের প্যান্টুলুনের উপর ১০ বছরের পুরোনো কোমরবন্ধ ( বেল্ট ) খুলে একেবারে যাচ্ছে তাই অবস্থা , আসে পাশের পুরুষ দোকানদারদের সাহায্যে সেবারকার মতো মুক্তি পান কোমল বাবু /
কিন্তু আসল ঘটনা টা হলো কোমল বাবুর শখের ছাতা খানা নিয়ে / প্রায় ৩০ বছরের পুরোনো একখানা ঢাউস ছাতা , খুব প্রিয় কোমল বাবুর / বয়সের ভারে কালো ছাতায় ফ্যাকাশে সাদা ছোপ , গুনে গুনে ১২ টা তাপ্পি মারা , সেই নিয়ে আপিসে যান কোমল বাবু /ছত্রপ্রেমী কোমল বাবু হৃদয় দিয়ে আটকে রাখেন প্রিয়তমা ছাতা সুন্দরীকে / তবে ছত্রসুন্দরীকে মেন্টেন করতে কিছু লৌহ পেরেক জাতীয় জিনিস পকেটে রাখেন উনি , রাস্তায় চলতে চলতে ছাতা বন্দ হয়ে মাথা মুখ ঢেকে যায় কোমল বাবুর , তাতে কি ? এ প্রেম অমরপ্রেম রাস্তায় যেতে যেতে দশবার ছাতা বন্ধ হয়ে গেলেও কুছপরোয়া নেহি ওই পিনের মতো বস্তু দিয়ে ছাতা ঠিক করে গন্তব্যের দিকে বিক্রমের সাথে এগিয়ে চলেন / কিন্তু ঘটনা টা হলো আপিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে ট্রেনে ওঠার সময় , আপিস টাইম অসম্ভব ভিড় কোনোরকমে ট্রেনে উঠলেন কোমল বাবু ভিড়ের মধ্যে ভিজে বেড়ালের মতো গা এলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন / ২৪ ইঞ্চির বুকের ভিতরের ধুকফুকনির শব্দ ছাড়া কানের কাছে অসংখ শব্দ যেমন - গালাগালি , তাস খেলার আলোচনা , রাজনৈতিক সমালোচনা তার সাথে বাদামওয়ালার বিকট সুর যুক্ত খাদ্য বিনোদনের নির্ঘন্ট / যাকগে বাঘাযতীন স্টেশন এসেগেলো কোনোরকমে নেমে কোমল বাবুর মাথায় হাত , ছাতা কই ? ছত্রপতি কোমল বাবুর যেন পত্নী বিয়োগ ঘটলো / বুক ঢিপ ঢিপ মাথা ভোঁ ভোঁ নিয়ে ঘামতে ঘামতে ঘরে ঢুকলেন কোমল বাবু , আসল ও অকৃত্তিম পত্নীর সান্তনা ও মধুর বচনেও বেদনা কমলো না কোমল বাবুর / না খেয়ে শুয়ে পড়লেন , রাতের ঘুম উবে গেলো ছাতার সাথে কত রোমান্টিক মুহূর্ত মনে পড়তে লাগলো / যথা রীতি ভগ্ন হৃদয়ে পরের দিন আপিস গেলেন কোমল বাবু / মাথা নিচু করে পার্কসার্কাস স্টেশনে নামলেন কোমল বাবু , জীবনের সবকিছুই যেন চলে গেছে , আরকি আছে এই পৃথিবীতে ? এসব ভাবতে ভাবতে এগোচ্ছেন / এমন সময় ডাক এলো - " কোমল দা .... ও কোমল দা "/
কোমল বাবু হতচকিত হয়ে পিছনে তাকান / আরে পানের দোকানের নন্তু দৌড়ে দৌড়ে আসছে , হাতে সেই ঢাউস ছাতা / কোমল বাবুর মনে লাড্ডু ফুটতে লাগলো / - " এইযে কোমল দা আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি / দোকানে ভিড় , কাল কে সন্ধ্যায় একটা শুটকো লোক এসে এ দুটো দিয়ে গেলো , আর বলেগেলো দয়া করে এ দুটো যেন আপনার হাতে দিয়ে দেই /”
ছাতাতে হাত বুলিয়ে নিয়ে কাগজ তা খুললেন , দেখলেন একটি চিঠি আর তাতে লেখা আছে –
সম্মানভাজনেষু দাদা ,
পত্রের প্রথমে আমার প্রণাম নিবেন / আমি আপনার কাছে একান্ত ভাবে ক্ষমা প্রার্থী / আপনার ওই ছাতা ব্যবহার বা বিক্রয় করার মতো যোগ্যতা আমার নেই , আমার অত্যন্ত ভুল হয়েছে , আর কখনো আপনার দিকে আর আপনার ছাতার দিকে ফিরে তাকাবো না / প্রণাম নেবেন //
ইতি ,
চোর

Comments

Popular posts from this blog