দেওয়াল ........................ ধীমান ভট্টাচার্য  (সবজান্তা গামছাওয়ালা )

অনুরূপা দেবীর বয়স সত্তর বছর / আজকের দিনটি অনুরূপা দেবীর কাছে সেই নতুন সেই প্রানোজ্জল  সেই চঞ্চল / পঁচান্ন বছর পরেও ছয়ই ডিসেম্বর যেন আজও উষ্ণতার পরশ আনে ,আজ যে ওদের বিবাহ বার্ষিকী / অনুপম অপুরূপা .......   অনুপম অপুরূপা .......  অনুপম অপুরূপা  বির বির করতে করতে  জানলা টা খুলে দিলেন উত্তরে হওয়ার সাথে এক ঝলক রোদ্দুর অনুরূপা দেবীর ঠোঠ ঘার টা আলতো করে ছুঁয়ে ড্রেসিং টেবিলে রাখা অনুপম বাবুর ছবিটার উপর পড়লো / লাল হয়ে যাওয়া  অনুপম সাহার  সাদা কালো ছবিটা উকিলের পোশাকে  আজও  অনেক কিছু  বলতে চায় , বলতে চায় অপুরূপা আজ যদি আমি হতাম তোমায় সেই সেদিনের মতো তোমাকে বুঝতাম  সেই সেদিনের মতো আদর করতাম / তোমার ঠোঁটে ,বুকে ,নাভিতে আমার অমিতে ভরিয়ে তুলতাম / যাহ কি সব ভাবছেন  অনুরূপা / আমি  অনুরূপাই  বলবো  কারণ  আমার গল্পের এই  চরিত্র টি এখন কল্পনায় মত্ত  নব যৌবনা ষোড়শী / অনুরূপা  অনুপম বাবুর ছবিটা বুকে চেপে ধরলেন বয়সে কিভাবে নিজেকে ব্যাক্ত করবেন ?

                                      আইন শাস্ত্র নিয়ে  ওদের একসাথে পড়াশোনা , প্রেম তার পরে পরিণয় সুগম পথ / উত্তর কলকাতার এই বাড়িতেই  শশুর শাশুড়ি ননদ নিয়ে ভরা সংসার  আদোরে , আল্লাদে ভরা জীবন /,পরাধীন ভারতের কান্না অনুরূপা কে  কাঁদলেও  অনুপম বাবুর দেশপ্রেম স্বাধীনতা সংগ্রামীদের  হয়ে মামলা লড়ায় আরো আরো আরো বেশি করে ভালোবাসায় পরাধীন হয়ে পড়লেন  অনুরূপা  / তাই তো  আইন ছেড়ে  অনুপম বাবুর সংসারে সুগৃহিনী হয়ে ওঠেন অনুরূপা/ প্রতি রাতে পরম তৃপ্তির ভালোবাসা একদিন নিয়ে এলো বড়োখোকা কে , তার দু বছর পরে ছোট খোকা , পিঠাপিঠি  দুই  দুরন্ত ছেলেদের নিয়ে ব্যাস্ত সংসার হটাৎ টলমল করে উঠলো/ কিছু  না বলে শরীরের মায়া ত্যাগ করলেন অনুপম  বাবু , এতো বড়ো হৃদয়ের মানুষ , হৃদয়ের বিশাসঘাতকতায় প্রাণ হারালেন / তার পর শশুর শাশুড়ি / শক্ত হাতে হাল ধরলেন অনুরূপা ওকালতি শুরু করলেন ননদের বিবাহ দিলেন , ছেলে দুটোকে পড়াশোনা শিখিয়ে  মানুষ করার চেষ্টা করেন কিন্তু  পারলেন কি ? হেসে ফেললেন অনুরূপা  ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে , আর ফোকলা হাসি দেখে আরো হেসে ফেললেন / মনে মনে ভাবলেন বড়ো খোকার কাছে একটা আবদার করবেন /
"বড়ো খোকা / একটু আমার ঘরে আসবি বাবা ?"
বড়ো খোকা সৌখিন কাশ্মীরি শাল খানা ঠিক করতে করতে  বেশ বিরক্তের সাথেই  বললো  " তুমি যা বিরক্ত করো না ! এই সক্কাল সক্কাল , বলো কি বলবে ?"
দেওয়াল ঘড়িতে সোয়া আটটা বাজে / দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে  অনুরূপা বললেন " এটা তোর  সক্কাল সক্কাল হলো বাবা ? নাতি নাতনি গুলো সেই কোন সকালে স্কুলে ...... "
বড়ো খোকা    " থাক .. থাক মা / সব কিছু জেনে বুঝে ... যাক কি বলবে বলো ?"
বড়ো বৌমা  হাতে আটা মাখা অবস্থায়  রান্না ঘর থেকে দৌড়ে এসে  বললো    " মা আপনি বলতে পারলেন ? আপনি তো জানেন ব্যাবসার কি অবস্থা ও তো রাতে দোকান থেকে ফিরে, মাঝরাত পর্যন্ত ঘোমাতে পারে না / এদিকে  দেখো ছোট কে , দিন দিন ফুলে ফেঁপে উঠছে "/
বেশি পড়াশোনা করা ছোট বৌমা ছোট খোকা মার্ মার্ করে  ঘরে ঢুকলো , সুন্দরী বউ এর পিছনে ছোট খোকা / ছোট বৌমা তার কামাগ্নি বুকচেরা নাইটি  ঠিক মতো না ঢেকেই  সপ্ত শুরে অষ্টম সুর যদি থেকে থাকে তা লাগিয়ে  তীক্ষ্ন বান ছুড়লো   " আমার হাসবেন্ড এর ট্যালেন্ট আছে ... দি  ম্যান  উইথ ট্যালেন্ট  অনলি ক্যান মুভ অন /"

অনুরূপা দুটি কান চেপে খাটে ধপ করে বসে পড়লেন  " থাক বাবা থাক / তোদের ঝগড়ার জন্যই  ব্যবসা ভাগ করেছি , আমার কষ্ঠের ব্যবসা তোদের নামে করে  দিয়েছি , তোরা ঘরে যা ....ঘরে যা...... ঘরে যা/" হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলেন অনুরূপা/ ছেলেরা বোকা পাঁঠার মতো যে যার ঘরে চলেগেলো /  অনুরূপা দেবী অনুপম বাবুর ছবির সামনে এসে হাসতে হাসতে বলতে থাকলেন অনেক হয়েছে বাবা দুপাটি বাঁধানো দাঁতের জন্য তোদের আলাদা  আলাদা করে বলতে পারবোনা  আর দেওয়াল চাই না একটু শান্তিতে শেষ ঘুম ঘোমাতে চাই //

Comments

Popular posts from this blog