আমার প্রথম দুঃখের কান্না - ধীমান ভট্টাচার্য (সব জান্তা গামছাওয়ালা )
জীবনের অনেক কথাই আজ মধ্যে বয়সে মনে মনে রোমন্থন করি / অনেক কিছু হারিয়েছি আবার বেশ কিছু পেয়েছি / হারিয়ে গেছে শৈশব , হারিয়ে গেছে শাসন , হারিয়ে গেছেন বাবা মা , শীতের দুপুরে মিঠে রোদ্দুরে ফুল কপি দিয়ে কই মাছ খাওয়া , একান্নবর্তী পরিবারে ঠাকুমার কাঁথার তলায় শুয়ে মহালয়া শোনা / আর পাঁচটা নিম্ন মদ্ধ বিত্ত পরিবারে যেরকমটা হয়ে থাকে / অনেক কষ্ট করে আঁকা লেখা আর আকাশ দেখা , আকাশ সেই ছোট বেলা থেকে আমার সাথে কথা বলে আজও তাই এইটা কিন্তু হারায় নি / অনেক কিছু হারিয়ে যাওয়ার সাথে হারিয়ে গেছে বাঘা / বাঘা ছিল আমাদের পারার লাট সাহেব , একটা দেশি কুকুর / প্রত্যেকেই বাঘাকে ভালোবাসতো / মাছের কাটা থেকে পুলি পিঠে সবই জুটতো বাঘার পাতে / আজকের দিনে গল্পের মতো শোনালেও আগেকার মানুষেরা ওরকমই ছিলেন /
একদিন অনেক রাতে সেজো কাকার শোবার ঘর থেকে আমার দাদু একটা আওয়াজ পেলেন , পরে উঠানে পায়চারি করতে থাকলেন , আমার ঠাকুমার চোখে পড়লো ঘটনাটা / ঠাকুমা দাদু কে বললেন : "কি গো শরীর ডা খারাপ লাগতাছে ? " দাদু উত্তর দেননা / অবশ্য তার কারণ ও আছে এতো দিন ঠাকুমার কাছে বাংলা দেশে দাদু ছেলে বেলায় যে কত বড়ো বীর ছিলেন তার গল্প গাছা শুনিয়েছেন তা এক লহমায় ভুলুন্ঠিত হবে / তবুও দাদু নিরুপায় হয়ে ঠাকুমাকে বললেন ; " বুড়োটার ঘরে চোর ঢোকছে " ( বুড়ো আমার সেজকাকার ডাক নাম ) / ব্যাস শুরু হয়ে গেলো ঠাকুমার মা শীতলা কে ডাকা আর বার বার বাথরুমে যাওয়া / সে এক তুলকালাম কান্ড / আমার বাবা সেজো কাকার ঘরের সামনে থেকে একটা ভাঙা লাঠি নিয়ে হম্বি তম্বি করতে লাগলেন / কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে ? অবশেষে সেজকাকা এসে দরজা খুললেন আর বাঘা বীর বিকক্রমে লেজ নাড়াতে নাড়াতে বেরিয়ে এলো , এই ছিল বাঘা / আমার খুব মনে আছে , সেদিন রাতে মা আমাকে ভাত বেরে দিচ্চিলেন , হটাৎ আমার এক বন্ধু ছুটে এসে খবর দিলো ঘাট পারে ( পুকুর পারে ) বাঘা মরে পরে আছে /
আমার সব কিছু যেন থেমে গেলো , ভিতর দিয়ে শত দুঃখ অশ্রু হয়ে ডুকরে উঠলো / মা আমাকে বুকে চেপে ধরলেন , আজ ও লিখতে বসে অশ্রুর করুন আবেদন উপলব্ধি করতে পারছি / জীবনে সেই প্রথম আপন জন কে হারাবার কষ্ট পেলাম , সেই শুরু শেষ হবে আমাকে দিয়ে , বাঘা আমাকে বুঝিয়ে দিলো আপন কাকে বলে / আমার প্রথম দুঃখের কান্না //
Comments
Post a Comment