ডাক্তার বাবু
ধীমান ভট্টাচার্য ( সবজান্তা গামছাওয়ালা )
পরাধীন
ভারতবর্ষ , একদল যুবক যুবতীর
পাগলপারা সশস্ত্র সংগ্রাম / অবিরত বন্দেমাতরম ধোনি , পুলিশের ভারী বুটের শব্দ
, আর তার মাঝে অবিভক্ত
বাংলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম
পঞ্চাননবাড়ি / ভোলা পঞ্চাননের
জীর্ণ মন্দির গভীর
জঙ্গলে ঘেরা প্রান্তর , রাতের
অন্ধকারে চলছে
শপথ নেবার পালা -
যেখানে
যত ভারতবাসী -
নিপীড়িত সন্তান
/
করি
আহ্বান করো
জাগরণ -
দাও
হে ওমর
প্রাণ /
দেশ
মাতৃকা ডাকিছে তোমায় -
হিন্দু মুসলমান
,
নব জুবা এস উঠাও সস্ত্র -
করো
হে জীবন দান /
উদাত্ত কণ্ঠে ধ্বনিত
হচ্ছে মা
ভারতীর গান / এক বৃদ্ধ শুভ্র কেশ ও দাড়ি
মন্ডিত মুখ
মন্ডলে নব যুবকের শক্ত
চোয়াল , শক্ত পেশী বহুল
হস্ত উত্তেলিত
করে বলে উঠলেন
" বন্দে মাতারাম "/ উপস্তিথ সকল যুবক যুবতীর
হাতে উদ্ধত অস্ত্র উত্তোলিত
করে বলে উঠলেন " বন্দে
মাতরম "/ ঠিক
তখনি এক যুবক দৌড়ে
এসে , তার হাতের খড়গ
উত্তেলিত করে বলে উঠলো " পেরেছি
ডাক্তার বাবু পেরেছি / মন্দিরার
ইজ্জত আর খুনের বদলা নিতে
পেরেছি , মার্ক সাহেবের মাথা টা তা ধর থেকে
আলাদা করে দিয়েছি "/ বৃদ্ধের
মুখ মন্ডলে জেগে উঠলো তৃপ্তির হাসি / আবার ধ্বনিত হলো
বন্দে বন্দে মাতরম / বৃদ্ধ বললেন " মার্কের
মৃত্যু সবে
ইতিহাসের সূচনা করলো / এ রকম হাজার
অত্যাচারী মার্কের রক্তে স্বাধীনতা
আসবে , বন্দে মাতরম "/
তমসার
অবসানে অরুনের আলোকে উদ্ভাসিত হলো ভারত ভূমি
, এলো নুতন দিন / কিন্তু কে এই মার্ক
সাহেব ? কেন হলো তার
এই মর্মান্তিক পরিণতি ? চলে যেতে হবে
পিছনে / সশস্ত্র বিপ্লবে উদবেলিত পরাধীন
ভারতবর্ষ , অগ্নি যুগের বীর
সৈনিক দের আত্মত্যাগ আর
দেশি হাত বোমা বন্দুকে
জর্জরিত ব্রিটিশ ,মত্ত সিংহের মতো
খেপে উঠলো / বাংলার গ্রামে
গ্রামে গোপনে
জারি করা হলো হুলিয়া
, অগ্নি যুগের বীরদের
সন্ত্রাস বাদী আখ্যা দেওয়া হলো / গ্রামে গ্রামে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো ইংরেজের পা
চাটা খোচরদের / ঠিক সেই সময় পঞ্চানন
বাড়ি গ্রামে এলো মার্ক ম্যাক্লাম
/ সুদর্শন গোড়া যুবক ,তার পরউপরকার
আর অসামান্য চিৎসায় পঞ্চানন
বাড়ি গ্রাম উচ্ছসিত হয়ে উঠলো / অবশ্য
তার কারণ ও ছিল সেবছর
বর্ষায় ওলাওঠা মহামারীর
আকার নিয়েছিল / এই পটভূমিতে
দেবদূতের মতো আসরে নামে
মার্ক সাহেব ,বিদেশী শিক্ষায় শিক্ষিত মার্ক মৃত্যু কে বাজিমাৎ দিয়ে বাঁচিয়েদিলো বহু
মানুষের প্রাণ / গ্রামে নর রুপি নারায়ণ
নামে পূজিত হলেন মার্ক ম্যাক্লাম
/ মার্ক স্তুতি পৌঁছলো
গ্রামের বদ্দি আদিত্য
নারায়ণের কাছে
/ আদিত্য নারায়ণ চক্রবর্তী
, বাপের কাছে শেখা আয়ুর্বেদ শাস্ত্র , লৌহ গঠন, শক্ত
চোয়াল , ক্ষুরধার চক্ষু দুটি যেন মানুষের
আত্মা কে চিনে নেবার
ক্ষমতা রাখে / কালো মোটা গোফ
জোড়া যেন শৌর্যের পরিচয়
দেয় / গ্রামের মানুষের কাছে আদিত্য নারায়ণ ডাক্তার
বাবু নামেই বিখ্যাত
/ পরাধীন নিপীড়িত অত্যাচারিত শিক্ষার আলো
না দেখতে পাওয়া মানুষ গুলির কাছে ডাক্তার বাবু
হলেন সাক্ষাৎ ভগবান / সাহেবের মতো স্যুট বুট
পড়া আদিত্য
নারায়ণ লাঠি
খেলায় দশ জোয়ানের সমান
, বন্দুকের নিশানা অব্যার্থ , অবলীলায় ইংরেজি , হিন্দি , আরো কত না
জানি বিদেশী
ভাষা গড় গড় করে
বলতে পারেন / গ্রামে ডাকাত পড়লে নিজেই রুখে দেন , বন্যায়
ন্যাংবোট পরে দশ জনের
সাথে বাঁধ গড়ার কাজে
হাত লাগান / কারো মেয়ের বিয়ে
দেওয়া থেকে শ্মশান
যাত্রা সবেতেই ডাক্তার
বাবু , আরো যে কত
ভালো ভালো কথা ডাক্তার
বাবু বলেন টা
গ্রামের মানুষে বোঝে না , শুধু বোঝে
ডাক্তার বাবু হলেন
ভগবান / সেবার
গ্রামের মানুষ ঠিক করলেন মার্ক
সাহেব কে সম্বর্ধনা হওয়া
হবে , ডাক্তার বাবুও তাই চেয়ে ছিলেন চেয়ে
ছিলেন তার ক্ষুরধার দৃষ্টি
দিয়ে মার্ক কে মেপে নিতে
,এই অনুষ্ঠানেই
দুজনের সামনে
সামনি দেখা / দুজনের দুজোড়া চোখ যেন মেপে
নিতে চাইছিলো দুজনের আত্মা কে / এই প্রত্যন্ত
গ্রামে স্যুট বুট পড়া এবং
ইংরেজিতে শান্ত
কণ্ঠে সম্ভাষণ করা মানুষ টি যেন
মরীচিকা মার্ক সাহেবের কাছে / করমর্দনের কায়দা
এবং বজ্র আঁটুনি যেন মার্ক সাহেবের
ব্রেড বাটারের মুষ্ঠি কে পেশন করে
চলেছে , বলতে চাইছে বুঝেছি সাহেব বুঝেছি তুমি
কে ? আবার সময় মতো
দেখা হবে সাহেব .... আবার
দেখা হবে / মন্দিরা এ গ্রামেরই মেয়ে
, শুভ্র জোৎস্নার মতো স্নিগ্ধ যৌবন যখন
চরম রূপে প্রতিফলিত হয়
পৃথিবীর বুকে , সমস্ত জগৎ
আলোকিত হয় সেই রূপে
, কিন্তু চন্দ্র তা
জানতেই পারে না তার রূপের ছটা
/ সেই রকমই মন্দিরাও জানেনা
তার রূপের কদর , সে শুধু বোঝে
পরাধীন ভারত
মাতা কে ব্রিটিশ শৃঙ্খল
থেকে মুক্ত করতে হবে / ডাক্তার
বাবু হলেন
মন্দিরার আদর্শ / ছেলে বেলায়
মা ও বাবা কে হারাবার
পর ডাক্তার বাবুই হলেন
মন্দিরার মা
ও বাবা / আদিত্য নারায়নের কাছেই মানুষ হয় মন্দিরা /অস্ত্র
চালনা থেকে প্রখর ইংরেজি শিক্ষা
সবই উজাড় করে দেন
ডাক্তার বাবু মন্দিরা
কে / তবে এ সকল
কথা বিপ্লবী যুবক যুবতীদের গ্রামের
সাধারণ মানুষের কাছে প্রকাশ
করা ছিল
মৃত্যু দণ্ড/ সে রকমই ,দিনের আদিত্য নারায়ণ যে রাতে
দেখা দিতেন এক অন্য রূপে
, এক বৃদ্ধ শুভ্র কেশি ও দাড়ি
মন্ডিত সন্ন্যাসী
রূপে তাও
বিপ্লবী যুবক যুবতীদের গ্রামের
সাধারণ মানুষের কাছে প্রকাশ
না করা কঠিন
আদেশ ছিল / কিন্তু যেন কেন সেই রাতে
পঞ্চানন বাড়ি গ্রামে রেট করলো
ব্রিটিশ পুলিশ / সে রাত ছিল
কাল রাত , ভয়ঙ্কর গোলা গুলির শব্দে রাতের
নিদ্রিত পক্ষীকুল কলরবে
মত্ত হয়ে উঠলো ,শিশুরা
ককিয়ে কেঁদে উঠলো মায়ের
কোলে /" বন্দে মাতরম " ......
শেষ বারের মতো বলে
শহীদ হলেন
বাংলার বহু বীর
সন্তান / মন্দিরা সহ এগারো জন
কে সঙ্গী করে পালিয়ে কলকাতায় চলে
এলেন ডাক্তার
বাবু /
পরাধীন
ভারতের উত্তর
কলকাতার একটি জীর্ণ দোতলা
বাড়ি /কুপির আলোকে
চলছে গোপন বৈঠক / উপস্থিত ডাক্তার
বাবু ও
এক জার্মান সাহেব ম্যানুয়েল এবং কলকাতার
কিছু উঁচু মানের
নেতা সঙ্গে মন্দিরা সহ এগারো জন
বিপ্লবী / বাতাস যেন থম থমে
/ কুপির আলো স্থির , ম্যানুয়েল বলে
উঠলেন " ডক্টর
ইউ ডোন্ট নো মার্ক
... !!!! হি ইজ এ
স্পাই অফ দোজ
ব্রিটিশ "/
ম্যানুয়াল
, ডাক্তার বাবুর হাতে কিছু কাগজ
দিলেন , ডাক্তার বাবু গম্ভীর ভাবে
বললেন '" আই উইল
টেক কেয়ার অফ মার্ক , বাট উই নিড সাম
ওয়েপেন্স রাইট নাউ
" /
" ওকে
ডক্টর আই উইল সেন্ড
ইউ দা ওয়েপেন্স "
বললেন ম্যানুয়েল
/
মিটিং শেষ
হলো .... কিন্তু শুরু
হলো "মিশন মার্ক " / ছ
মাস পর পঞ্চানন
বাড়ি গ্রামে গোপনে প্রবেশ করলো এগারো জন
যুবক যুবতী ও
একজন বৃদ্ধ / গ্রামে
তখন চলছে চরকের মেলা
আর সেই মেলায় মাদারির
খেলা দেখাতে শুরু করলো সেই
দল / একটি মেয়ে গায়ের
রং কুচ কুঁচে কালো
, এঁটে বাঁধা খোঁপা , অনেকটা উপর করে সাঁওতালি কাপড়
,বক্ষ যেন দোদুল্যমান উন্মত্ত
যৌবন / একটি দড়ির উপর
দিয়ে দুহাতে একটি দণ্ডের সাহায্যে
নিজের ও যৌবনের ভারসাম্য
বজায় রেখে খেলা দেখিয়ে
চলেছে / আর দুজন যুবক
গেয়ে চলেছে সাঁওতালি গান / দর্শকের মধ্যে এক গোড়া সাহেব
লোলুপ দৃষ্টি তে গ্রাস করে
চলেছে মেয়েটির যৌবন / মন্দিরার হাতে ডাক্তার বাবু
সপে দিয়েছেন মার্কের জীবন , এই সুযোগ .... জীবন
দিয়ে যৌবন দিয়ে দেশ
মাতৃকার ঋণ শোধ করবার
সময় এসে গেছে / খেলা
শেষ কামাই
শেষ/ লোকে এদিক ওদিক
চলে গেছে , কিন্তু সেই গোড়া সাহেব
এখনো গ্রাস করে চলেছে মন্দিরার
যৌবন / এ ছমাসে প্রশিক্ষিত
মন্দিরা অনেক কিছু শিখেছে মিনু মাসির
কাছে , মিনু কে
লোকে বেশ্যা বলে/ কিন্তু এক বেশ্যা
কিভাবে বহু সাহেব
কে খুন করেছে তা আজ মন্দিরা
জানে /মিনু মাসির
কথা এখনো মনে পরে
" জীবনটা কে আরাম দেবার
জন্য অনেক বেশ্যা জন্মায়
আর আমি জন্মেছি পুরুষের
কাছ থেকে আরাম পাবার
জন্য আর
শুওরের বাচ্চা গুলোকে জাহান্নুমে পাঠাবার জন্য /"
একটি
নির্জন জায়গার দিকে এগিয়ে যায়
মন্দিরা , মার্ক ওকে অনুসরণ করে/
ঠোঠ কামড়ে কামাবেগের প্রকাশের মাদ্ধমে মার্ক
কে ইশারা করে মন্দিরা ... মনে
মনে ভাবে , একাই শেষ করবে
মার্ক কে ..... শালা শুওরের বাচ্চা
কে আজই শেষ
ভোগ করিয়ে দেবে /মার্ক সাহেব মন্দিরের হাত ধরে বললো
" তোমার নাম
টা কি আছে সন্ন্ড্ডোরি ?"
" পলাশী বাবু ...পলাশী ..... হাত
টো ছাড় না কেনে
বাবু "/
" নো
পলাশী নো .... ইয়ে
হাট হামি ছাড়িবার জন্য
ডোরিনাই তুম্হাকে
হামার সঙ্গে যাইতে হবে "/
"কুথায়
বাবু ? তুমার
ঘর টো তে ? সুহাগ
দিবে ? পয়সা দিবে ? " মার্ক
কে কাছে আরো
কাছে আস্তে দেয় মন্দিরা / সারির
তলাতে কোমরে গোজা জার্মানি
পিস্তল টা এক বার
লুকিয়ে হাত দিয়ে দেখে
নেয় ও / মন্দিরা এখনই
শেষ করে দিতে পারে
মার্ক কে , কিন্তু না
, ডাক্তার বাবুর নির্দেশ মার্কের ডেরায় গিয়ে ওকে মারতে
হবে আর সংগ্রহ করতে
হবে মার্কের ঠিকুজি /
" সন্ন্ড্ডোরি চলহ হামার
সাথে সামনে হামার ঘোড়ার গাড়ি ওয়েট কইরা
আছে "
বুকের
ভিতর টা ঢুকে
পুক করে ওঠে মন্দিরার
, মার্কের সাথে গাড়িতে ওঠে
ও / নালের শব্দ তুলে এগিয়ে চলে গাড়ি , মন্দিরাকে
জড়িয়ে ধরে মার্ক সাহেব
স্তনে ও পাছায় হাত
ঘষে , ঘেন্নায় ও রাগে গা
ঘিন ঘিন করে ওঠে
মন্দিরার মনে মনে বলে
ওঠে ... বন্দে মাতরম .... মা তোমার চরণে
তাজা রক্ত দিতে চলেছি
, হয় ওই শয়তান সাহেবের
নয় আমার গ্রহণ কোরো
মা , যদি কিছু পাপ করে থাকি মাফ
করে দিও মা
আমার /
নিজেকে
সামলে নিয়ে মন্দিরা মার্ক
কে বলে " তু
কি এখনই সব কিছু
করে লিবি ? ঘরের জন্য কিছু
রাখ / " মার্ক হো
হো করে হেসে ওঠে
/ এদিকে সূর্য ডুবে
গেলো , সেই জীর্ণ মন্দির
, সেই সুভ্রকেশী সন্যাসী
সকল বিপ্লবীদের উদ্দেশে বললেন -" মন্দিরা আজ তার জীবনের
শ্রেষ্ট পূজা মায়ের পায়ে
অর্পণ করতে গেছে , হয়তো
সফল হবে হয়তো বা
সফল হবে না / কিন্তু
মন্দিরা এই গ্রামের
প্রথম কন্যা যে কিনা নিজের
জীবন উৎসর্গ করতে
চলেছে , আমার খোচর সেখানের
সব খবর আমাকে দেবে
/ তবে এই সংগ্রাম এখন
আরো বৃহত্তরো আকার নিয়েচে , পৃথিবী
জুড়ে বাজছে যুদ্ধের দামামা মার্ক সাহেবের রক্তই বড়ো কথা নয়
পরবর্তী কালে আরো অনেক
অনেক বড়ো কাজ আমাদের
করতে হবে , সময়ই তা স্থির
করে দেবে ?" সকলে বলে ওঠে " বন্দে
মাতরম "/মার্ক সাহেবের গাড়ি ঢুকলো সাহেবের
বাগান বাড়িতে ,বুঝতে অসুবিধা হলোনা মন্দিরার, কারণ ঘোড়ার নালে
পাথরের মোরাম করা রাস্তার
শব্দ ,বাংলোর রাস্তায় পাথরের মোরাম সে আগে দেখেছে
/ মন্দিরা ভাবছে আর কতক্ষন তাকে
অভিনয় করতে হবে ? একেবারে
পাঁজাকোলা করে খাটের উপর
ফেললো শয়তান মার্ক / বলে উঠলো - " কম
অন মান্ড্ডিরা ডেভি শুট মি
!!!!! শুট মি !!!! শুট মি ... হামাকে ফুল ভাবিয়াছ ? হামাকে
? "
মন্দিরা বুঝে
ফেলে ছিল কি ভনায়ক
ভুল করে ফেলেছে ও
/ তখনি শয়তান টাকে মেরে
ফেলা উচিত ছিল / চোখ
বন্দ করে রেখেছিলো মন্দিরা
, এক ঝটকায় কে যেন ওর
কোমর থেকে পিস্তল টা
কেড়ে নিলো / চোখ খুললো মন্দিরা
, মার্ক একা নয় , গ্রামের
মোড়ল সনাতন চক্রবর্তী , থানার দারোগা বাবু লোলুপ
দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ওর
শরীর টার দিকে , আর
তার সাথে রাতের হায়নার মতো হেসে
চলেছে - হা হা হা
হা হা হা ................
মন্দিরা
মনে মনে বলে উঠলো
... মা ভবানী .... মা ভারতী এদের
চিনে নিও , এদের ক্ষমা করো
না / আমি জীবন দিয়ে
দেখিয়ে যাবো এক ভারতীয় নারীর
মহা শক্তি কে .... বন্দে মাতরম / একে একে পিশাচ
গুলো ঝাপিয়ে পড়লো ওর উপর
ছিন্ন ভিন্ন করে তুললো মন্দিরার
ফুলের মতো শরীর টা
কে , যোনি তে প্রবেশ
করলো পুরুষ নামক কাপুরুষ গুলোর
যৌন দ্বন্দ্ব / মন্দিরা মনে মনে বললো
আর কবার ভোগ করবি
আমাকে সুয়ারের বচ্চার দল ? এক বার
.... দু বার ,,,,,,, তিনবার ....... দশ বার ..... কিন্তু
সমস্ত ক্ষমতা একবার শেষ হবে আর
সেই শেষ থেকেই শুরু
হবে আমার .... হে মা
ভারতী আমায়
শক্তি দাও /
শত যন্ত্রনা সহ্য করে , অজ্ঞানের
ভান করে পড়ে রইলো
মন্দিরা অপেক্ষা করলো সময়ের / এক
সময় এলো সেই সময়
হাফিয়ে উঠলো শয়তান গুলো
/ গ্রামের মোড়ল কাম নেশায়
মত্ত হয়ে শরীরের ঘাম
মুছতে মুছতে আবার এগিয়ে এলো
মন্দিরার নগ্ন রক্ত মাখা
শরীরটার দিকে / যাঁকে চিরটা কাল মোড়ল কাকা
বলে ডেকে এসেছে মন্দিরা
.... তার এই শয়তান রূপটা
সহ্য করতে পারলো না
ও / দু হাটু জোড়া
করে মোড়লের যৌন দন্ডে মোক্ষম
আঘাত হানলো , যৌন ও মোদের
নেশায় মত্ত শয়তান গুলো
কিছু বুঝে ওঠার আগে
বিদ্যুতের বেগে শরীর টাকে
ছুড়ে দিলো মোড়লের
বুকের উপর , ষাটোর্ধ সনাতন
চক্রবর্তী লুটিয়ে পড়লো পাথরের মেঝের
উপর , এক মুহূর্ত অপেক্ষা
না করে দরজার ঢাসা
খানা তুলে- "জয় মা ভারতী
" বলে বসিয়ে দিলো মোড়লের মাথায় এক
আঘাতে দুখন্ডিত হলো শয়তান টার
মাথা , ঘিলু রক্তে মাখামাখি
হয়ে গেলো / এ যেন মহাকালির
রূপ , নগ্নরূপে , উন্নত স্তন যুগলের থেকে
ঝরে পড়া রক্ত তো মা এর
রূপ ,এই রক্তই সন্তাননের কাছে মাতৃ দুগ্ধ
পরম অমৃত / মন্দিরার আত্মায় তখন মা
ভারতী যেন
..... করাল বদনাং ঘোরাং - মুক্ত কেসিং চতুর্ভুজাং - ....
মন্দিরা
গর্জে উঠলো '" বন্দে
মাতরম " /
হিংস্র
সিংহের মতো হাতের পিস্তল
তুলে ঝাপিয়ে
পড়লো মার্ক , মন্দিরার তলপেটে পদাঘাত
করে ফেলে দিলো মেঝেতে
, আর তার পর বুকের
উপর উঠে মাথা লক্ষ
করে চালিয়ে দিলো হাতে ধরা
পিস্তল / এলো সেই সময়
, মন্দিরার
চোখের সামনে থেকে মুছে গেলো
পৃথিবীর আলো , ও দেখলো অপূর্ব
জোতির্ময়ী এক মাতৃ
রূপ যেন হাত পেতে
ডাকছে .... কি সুখ .... কি আনন্দ
..... যেন পরম তৃপ্তি ..... গভীর
.... আরো গভীরে .... তলিয়ে যেতে লাগলো মন্দিরা
.... গ্রামের মাঠ
.... পঞ্চানন মন্দির .... কাশফুল .... ডাক্তার বাবুর স্নেহ ময় মুখ
যেন দূরে আরো দূরে
চলে যেতে লাগলো ..... জড়ানো
কণ্ঠে বলে উঠলো মন্দিরা
" আসি ভাই .. আসি বন্ধু .... আমার
কাজ আমি করলাম ... স্বাধীন
দেশ না হয় তোমরা
দেখো , পালন কোরো স্বাধীনতা
.... বন্দে মাতরম / খবর টা পৌছালো
পঞ্চানন মন্দিরে আত্ম গোপন করা
, ডাক্তার বাবু আর তরুণ
বিপ্লবীদের কাছে / তরুণ তরুণী বিপ্লবীরা
গর্জে উঠলেন - -- তাদের গর্জন যেন বজ্রপাতের মতো
পঞ্চানন মন্দিরে প্রতিফলিত হয়ে সারা ভারতে
ছড়িয়ে পড়লো , তারা বললেন " ডাক্তার
বাবু আজ
আমাদের হাতে বিদেশী অস্ত্র
... আত্মায় আপনার দেওয়া অগ্নি মন্ত্র একবার সুযোক দিন আমরা মার্ক
কে খতম করে আসি
... থানায় আগুন জ্বালিয়ে শেষ
করে দিয়ে আসি /"
"না
ভাই ও বোনেরা / সবাই
নয় এ কাজ করবে
অরুন , অরুনের বুদ্ধির পরিচয় তোমরা আগেও পেয়েছো / মার্ক
খুব চালাক ,ওকে মারবে অরুন
মান্ডি/ "
মন্দিরের
কোনায় মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে
থাকা কিশোর
টির দিকে তাকিয়ে ডাক্তার
বাবু বললেন - " মোবারক হোসেইন , যদিও মন্দিরার শহীদ
হওয়া আমাদের কাছে অতি
দুঃখের / কিন্তু / বিপ্লবীদের কাছে দুঃখের কোনো
স্থান নেই , দেশ মাতৃকা কে
স্বাধীন করাই এক মাত্র
পথ / তোমার কাজ তুমি খুবই
দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছো , এই
ষোলো বছরের জীবনে তুমি যে সাহস
ও বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছো তার জন্য গর্ব অনুভব
করছি /"
মোবারক
মাথানিচু করে বলে উঠলো - " আজ্ঞা
দেন ডাক্তার বাবু / ইনশাআল্লাহ দেশের
জন্য আমি কুরবান হতেও
পারি "/
" না
মোবারক না
তোমাকে আমার প্রয়োজন / তোমাকে
শুধু খবর
আনতে হবে মার্ক ঠিক
কখন একা থাকে , সাত
দিনের মধ্যে , তবে নিজেকে বাঁচিয়ে
, সামনে অনেক বড়ো সংগ্রাম
/"
ইনশাআল্লাহ !! বন্দে মাতরম "/ বলে
বিদায় নিলো মোবারক /
গ্রামে
ব্রিটিশ পুলিশের তল্লাশি বেড়ে গেলো , কারণ
তারা জেনে ফেলেছে , ডাক্তার
বাবু ও বাকি বিপ্লবীরা
গ্রামে ঢুকেছেন / ঢেরা পিটিয়ে ঘোষণা
করা হয়েছে , কিন্তু গ্রামের
মানুষ গোপনে একজোট হয়েছে , তারা বুঝতে পেরেছে
ডাক্তার বাবু সত্যই ভগবান যান দিয়ে হোক
তারা গ্রামের দেবতা কে বাঁচাবে / এই
উত্তপ্ত পটভূমি তে এলো সেই
দিন, ঠিক
পাঁচ দিন পরে মোবারক খবর দিলো - কাক
ভোরে মার্ক সাহেব বাংলোর বাইরে খোলা আকাশের নিচে
শরীর চর্চা করে / গরিলা যুদ্ধে পারদর্শী অরুন মান্ডি রাত
জেগে আম গাছের উপর অপেক্ষা
করে রইলো হাতে উদ্ধত
খড়গ / ডাক্তার বাবুর আদেশ খুব
অল্প সময়ে কাজ করে
,বেঁচে ফিরতে হবে /
অবশেষে
এলো সেই সময় / ভোর
রাতে বাংলো
থেকে বেরহলো মার্ক , ঘরের দরজার কাছে
বড় আম গাছের নিচে
দাঁড়িয়ে দু হাত ছড়িয়ে
স্বাস নিতে লাগলো , ঠিক
সেই মুহূর্তে
বিদ্যুতের গতিতে একটি ছায়া ঝাপিয়ে
পড়লো সাহেবের উপর মুহূর্তে মার্কের
মাথা ছিটকে পড়লো মাটিতে ফিনকি
দিয়ে বেরোনো রক্ত পিপাশা
মুক্ত করলো
মা ভবানীর , অরুন যেন দেখতে
পেলো তার আদরের বোন
মন্দিরার হাসি মাখা মুখ
খানি / তার পর সারাদিন
গ্রামের প্রান্তে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকলো অরুন , আর রাতে ফিরে
এলো পঞ্চানন মন্দিরে তার হাতের খড়গ
উত্তেলিত করে বলে উঠলো " পেরেছি
ডাক্তার বাবু পেরেছি / "
ডাক্তার
বাবুর মুখ
মন্ডলে জেগে উঠলো তৃপ্তির হাসি / আবার ধ্বনিত হলো
বন্দে মাতরম / ডাক্তার বললেন " মার্কের
মৃত্যু সবে
ইতিহাসের সূচনা করলো / এ রকম হাজার
অত্যাচারী মার্কের রক্তে স্বাধীনতা
আসবে , বন্দে মাতরম "/
সকলে
মেতে উঠলেন বন্দে
মাতরম ধোনিতে / ডাক্তার
বাবু সবাইকে শান্ত হতে বললেন - " শান্ত
হও ভারত মাতার বীর
সন্তানেরা , আমার যাবার সময়
এসেছে .. আমার নেতা .... তোমার
নেতা .... ভারতের নেতা ডাক দিয়েছেন
বলেছেন - তোমরা আমায় রক্ত দাও
, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব / আমায়
যে যেতে হবে তবে
তোমাদের নিতে হবে বিপ্লবের
দায়িত্ব , এক দিকে অহিংস
আন্দোলন চলছে , অপর দিকে সশস্ত্র
বিপ্লব , ব্রিটিশ ক্লান্ত , সারা পৃথিবী জুড়ে
বেজেছে যুদ্ধের দামামা আমার মনে হয়
খুব শিগ্রই স্বাধীনতা আসবে / তবে আমি নিয়ে
যাবো দুজন কে ... এস
অরুন , এস মোবারক ওই দেখো
তরুণ অরুনের লাল আভা যুদ্ধ
শুরুর শুভ সময়ে বেজে
উঠেছে পার্থের
সংখ .....
তিন
টি মানুষ অদৃস্য হলেন প্রান্তরে / ডাক্তার
বাবুর মুখে শোনাগেলো সেই
মন্ত্র ......
যেখানে
যত ভারতবাসী -
নিপীড়িত সন্তান
/
করি
আহ্বান করো
জাগরণ -
দাও
হে ওমর
প্রাণ /
দেশ
মাতৃকা ডাকিছে তোমায় -
হিন্দু মুসলমান
,
নব জুবা এস উঠাও সস্ত্র -
করো
হে জীবন দান /
লাল
থালার মতো উদিত হলো
লাল সূর্য অনেক প্রত্যাশা আর
স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে / বন্দে মাতরম //
Comments
Post a Comment